বৃষ্টির পানি কি নিরাপদ ও বৃষ্টির পানির মধ্যে কি কোন ভিটামিন আছে?
বর্ষা মানেই পেটের
রোগ। বর্ষা মানেই হাঁচি, কাশি, সর্দি, জ্বর।এটাই প্রচলিত ধারণা আমাদের। কিন্তু, বর্ষাই হয়ে উঠতে
পারে রোগমুক্তির ঋতু। কিন্তু, কীভাবে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৃষ্টির পানি পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ পানীয়।
অস্ট্রেলিয়ার একটি
গবেষণা বলছে, বৃষ্টির পানি পান করা সবচেয়ে নিরাপদ। মাটি বা
পাথরে থাকা মিনারেলস আর বর্জ্য, বৃষ্টির পানিতে থাকে
না। সে কারণেই বৃষ্টির পানি পানে অগাধ উপকারিতা দেখছেন বিজ্ঞানীরা। এক নজরে দেখে
নেওয়া যাক বৃষ্টির পানির উপকারীতা-
১) হজমশক্তি বাড়ায়ঃ
বৃষ্টির জলে থাকে
অ্যালকালাইন পিএইস যা অ্যাসিডিটি কমায়, হজমশক্তি
বাড়াতে সাহায্য করে।
২) রাসায়নিক মুক্ত জলঃ
ট্যাপের পানি
জীবাণুমুক্ত করতে ক্লোরিন ব্যবহার করা হয়। আর ফ্লোরাইড আসে মাটির নিচ থেকে। বেশি
মাত্রায় ক্লোরিন বা ফ্লোরাইড পেটে গেলে গ্যাসট্রাইটিস, মাথাব্যথার মতো সমস্যা বাড়ে। বৃষ্টির পানিতে ফ্লোরাইড বা ক্লোরিন, কোনওটিই থাকে না।
৩) ক্যান্সার বিরোধীঃ
বৃষ্টির পানিতে থাকা
অ্যালকালাইন পিএইস ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রুখে দেয়। ক্যান্সার রোগীদেরে ক্ষেত্রে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে বৃষ্টির পানি।
৪) পাকস্থলীর সমস্যা
দূর করেঃ
ট্যাডিশনাল ভারতীয়
ওষুধ বিদ্যায় প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ থেকে ৩ চামচ বৃষ্টির জল খেতে বলা হয়।
পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটি বা আলসার থাকলে বৃষ্টির পানি ওষুধের কাজ করে।
৫) বৃষ্টির পানি বনাম
সুন্দর চুলঃ
কোনও মিনারেলস না
থাকায়,
বৃষ্টির পানি অত্যন্ত কোমল। এই পানিতে মাথা ধুতে পারলে
শ্যাম্পু বা সাবানের চেয়েও ভাল কাজ দেয়।
৬) ত্বকের পক্ষে
উপকারীঃ
বৃষ্টির পানিতে গোসল
করলেই অসুখ। এটা পুরনো ধারণা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সুন্দর সুস্থ ত্বক পেতে হলে, বৃষ্টির পানি অত্যন্ত
উপযোগী। সুগন্ধি সাবানে থাকে অ্যাসিডিক পিএইস যা ত্বককে রুক্ষ ও প্রাণহীন করে দেয়।
বৃষ্টির পানি সে সব নেই।
৭) জ্বালা ও
ব্যাকটেরিয়া নাশকঃ
বৃষ্টির পানি কোষে জমে থাকা খারাপ ব্যাকটেরিয়াকে সাফ করে
দেয়। ত্বকের জ্বালাও দূর হয়।
বৃষ্টির
পানিতে কি ভিটামিন আছে?
যদি সরাসরি জানতে চান তবে
বলবো- না, বৃষ্টির পানিতে কোন ধরনের ভিটামিন থাকে না।
ঘুরিয়ে
বলতে গেলে- হ্যাঁ, বৃষ্টির পানিতে ভিটামিন B১২B১২ পাওয়া যেতে পারে তবে সেটা
বৃষ্টির পানির জন্য নয় বরং কিছু ব্যাকটেরিয়ার জন্য। একটু ব্যাখ্যা দিলেই
পরিষ্কার বোঝা যাবে।
আমরা তো জানিই পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের অণুজীব ঘুরেফিরে বেড়ায়। অণুজীবদের মধ্যে কিছু ব্যাকটেরিয়া বায়ো সিনথেসিসের সময় বাই প্রোডাক্ট হিসেবে ভিটামিন B১২B১২ তৈরি করে থাকে। এই ধরনের কয়েকটি ব্যাকটেরিয়ার নাম দিলাম- Pseudomonas denitrificans, Bacillus megaterium, Propionibacterium freudenreichii, Streptomyces olivaceus, Prevotella copri ইত্যাদি।
উপরোক্ত
ব্যাকটেরিয়া যদি বৃষ্টির পানিতে উপস্থিত থাকে তবে ভিটামিন B১২B১২ পেয়ে যাবো, আর
না থাকলে পুরোই ভিটামিনহীন বৃষ্টির পানি। উনাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পরীক্ষা
করা ছাড়া উপায় দেখি না, অবশ্য কীভাবে শর্টকাট
উপায়ে পরীক্ষা করা যাবে তা জানা নেই।
প্রশ্ন
হলো যে পরিমাণ ভিটামিন B ১২। B ১২ পাবো বৃষ্টির পানি থেকে তা
কি আমাদের শরীরের জন্য যথেষ্ট? খুবই সামান্য পরিমাণ পাওয়া
যায়, সেক্ষেত্রে আমার জন্য কাজের কিনা জানতে স্বাস্থ্য বিশারদের
পরামর্শ নেয়া উচিৎ। আর বৃষ্টির পানি মাটি দিয়ে গড়িয়ে গেলে ভিটামিন B১২B১২ এর পরিমাণটা একটু বেড়ে
যেতে পারে, মাটিতে তো আর অণুজীবের অভাব নেই! এই পানি নিশ্চয় আমি খেতে চাইবো
না!
বৃষ্টির
পানি পানের উপকারিতা কেমন?
বৃষ্টির পানি পানের আগে
তিনটি বিষয় খেয়াল রাখা খুবই জরুরী-
·
কোথায় থাকি?
·
কতক্ষণ ধরে বৃষ্টি হচ্ছে?
·
পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি কেমন?
যেই বিষয়টা খেয়াল রাখা
সবচেয়ে জরুরী, আমি কোথায় থাকি? শিল্প
কারখানাযুক্ত এলাকার বায়ু মোটেও সুবিধার নয়। আবার অন্য কোন কারণেও এলাকার
বায়ুমণ্ডলের অবস্থা খারাপ হতে পারে। বৃষ্টি নিশ্চয় এই বায়ুমণ্ডল দিয়ে আসবে, তখন
আর পানি ভালো থাকবে না। এসিড রেইনও হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি এড়িয়ে
যাওয়াটাই উত্তম।
যেকোনো অঞ্চলেই শুরুর দিকের বৃষ্টির পানি
যথেষ্ট দূষিত। বায়ুমণ্ডলে কমবেশি রোগজীবাণু, দূষিত পদার্থ সব অঞ্চলেই
থাকে। বৃষ্টি হলেই এসব পানির সাথে মিশে পড়তে থাকে। এই পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়াটা
মোটেও অস্বাভাবিক নয়। আমার উচিৎ হবে একটু
অপেক্ষা করা, এই ১০ থেকে ১৫ মিনিট।
বৃষ্টির পানি আমি কীভাবে
ধরছি এটাও বেশ জরুরী। ধরুন, ঘরের চাল বেয়ে পানি পড়ছে
আর আমি সেই পানি সংগ্রহ করলাম। এখন ঘরের চালে যে উল্টাপাল্টা কিছু নেই, পক্ষী
সম্প্রদায় যে ইয়ে করেনি তার গ্যারান্টি কে দিবে! তাই, আমার
পানি সংগ্রহ পদ্ধতি হওয়া চাই স্বাস্থ্যসম্মত,
নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে
সংগ্রাহী সরঞ্জাম।
রিস্ক
ফ্যাক্টরগুলো বাদ দিলে বৃষ্টির পানি পৃথিবীতে প্রাপ্ত পানির মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ। আমরা অনেকেই সাপ্লাই পানি
খেয়ে থাকি যার মধ্যে কিছু রাসায়নিক পদার্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে যায়।
টিউবওয়েলের পানিও কিছু ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বিশেষত মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক থাকলে।
স্বাস্থ্যসম্মত
উপায়ে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করতে পারলে,
পান
করার আগে ফিল্টার করে বা ফুটিয়ে নিলে নিঃসন্দেহে বৃষ্টির পানি পান করা সবচেয়ে
নিরাপদ, পানিবাহিত রোগ থেকে বেঁচে
থাকা যাবে। অতিরিক্ত কোন উপকারিতা থাকার কথা নয়। বেশ ঘাটাঘাটি করলাম, কিছু
উপকারিতা যেমন হজমশক্তি বেড়ে যাওয়া,
রক্তের পিএইচ নিয়ন্ত্রণের
বিষয়ে বলা হলেও এবিষয়ে সেরকম কোন নির্ভরযোগ্য উৎস বা গবেষণাপত্র পাইনি।
বৃষ্টির
পানির সবচেয়ে ভালো উপকারিতা কাপড়কাচার ক্ষেত্রে। কোন ধরনের এক্সট্রা লবণ না থাকায়
এতে সাবানের অপচয় কম হয়, ফেনা খুব ভালো হয়। এছাড়া খনিজ লবণ বা ধাতু
যেমন আয়রনের উপস্থিতি না থাকায় চুলের জন্যও বেশ ভালো, আরামে
গোসল করতে পারবো।

Comments
Post a Comment