অতিরিক্ত পানি পান করলে কি সমস্যা হয়?
২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারির একটি ঘটনা!ক্যালিফোর্নিয়ায় এক মহিলা হঠাৎ করেই মারা যান। তিনি ছিলেন তিন
সন্তানের মা। তার মারা যাওয়ার কারণ হিসেবে ডাক্তাররা অতিরিক্ত পানিকেই দায়ী করেছিলেন। কারণ মারা যাওয়ার
কিছুক্ষণ আগেই তিনি একটি পানি খাওয়ার প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে এসেছিলেন। প্রতিযোগীতায় তিনি প্রায়
২ গ্যালন (৬.৪ লিটার) পানি খেয়ে ফেলেছিলেন। ঘটনাটি শুনে হয়তো অবাকই হয়েছেন। কারণ পানির অপর নাম
জীবন হিসেবেই জানতেন এতকাল। পানি খাওয়ার নানান উপকারিতার কথাও অনেক শুনেছেন এতোদিন। কিন্তু
অতিরিক্ত পানি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে হয়তো আপনি জানতেন না।
‘কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়’ এই কথাটি অহরহই শোনা যায়। পানি খাওয়ার ক্ষেত্রেও কথাটি একেবারে সত্যি।
পানি খেয়ে মৃত্যুবরণের ঘটনা একটি নয়। অনেকবারই এমন অনেক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে শুধু মাত্র অতিরিক্ত
পরিমাণে পানি গ্রহণের কারণে। অতিরিক্ত পানি শরীরে সৃষ্টি করে বাড়তি চাপ যা শরীরে নানান বিরূপ প্রভাব ফেলে।
এতে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে এবং মৃত্যুও ঘটে। জেনে নিন অতিরিক্ত পানি পান করলে শরীরে কিভাবে বিরূপ
প্রভাব পড়ে সেই সম্পর্কে।
১. আপনি যেখানেই যান না কেন আপনার হাতে একটা পানির বোতল থাকে। যখনই বোতলটা খালি হয়ে যায় তা
পূর্ণ করার চেষ্টা থাকে আপনার। আপনি হয়তো মনে করেন , সবসময় পানি খেলে আপনার শরীর ভাল থাকবে।
কিন্তু এটা ঠিক নয়। এটা আপনার শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট পদ্ধতি নষ্ট করে নানাবিধ সমস্যা তৈরি করে।
২. কোথাও হয়তো আপনি পড়েছেন দিনে ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করা উচিত। কিন্তু আপনার হয়তো জানা
নেই আপনি যেসব খাবার খান তাতেও পানি থাকে। তখন আপনার যা প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি পানি পান করা
হয় আপনার। এতে শরীরে ওভারহাইড্রেশন তৈরি হয়।
৩. কেউ কেউ মনে করেন বেশি বেশি অথবা পরিষ্কার মূত্র ত্যাগ করলে শরীরে সুস্থতা বজায় থাকবে। এ কারণে
অনেকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি পান করেন।
৪. যদি আধঘণ্টা পর পর আপনার মূত্রত্যাগের প্রয়োজন হয় এবং অতিরিক্ত পানি পানের জন্য রাতেও বারবার
বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার ওভারডিহাইড্রেশন হয়েছে।
৫. অতিরিক্ত এবং কম পানি পান-দুইটির কারণেই মাথা ব্যথা হতে পারে। বেশি পানি পান করলে শরীরের সেলগুলা
বড় হয়ে যায়। মস্তিষ্কের সেলও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং খুলিতে ধাক্কা দেয়। এ কারণে মাথা ব্যথা দেখা দেয।
৬. অতিরিক্ত পানি পানে কিডনির কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তখন বমি
বমি ভাব হয়।
৭. অতিরিক্ত পানি পান করলে যেহেতু কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না তখন হাত, পা, ঠোঁট ফুলে যায়।
আবার এতে ওজনও বাড়ে।
৮. মাংসপেশী ক্রাম্প বা দুর্বল হয়ে পড়ে অতিরিক্ত পানি পানের কারণে।ওভারডিহাইড্রেশন হলে শরীর ক্লান্তও লাগে।
সুতরাং এসব কারনে আশাকরি বুঝতেই পারছেন কথাটা কতোটুকু সত্যি। তবে সুস্থ থাকার জন্য পানি তো খেতেই
হবে। পানি একেবারে কম খেলেও শরীরে নানান সমস্যা দেখা দেয়। তবে একবারে বেশি পানি না খেয়ে কিছুক্ষণের
বিরতি দিয়ে খেতে হবে পানি।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী একজন মানুষের স্বাভাবিকভাবে ২-৩ লিটার পানি পানই যথেষ্ট। তবে ইউরোপিয়ান
ফুড সেফটি অথরিটির এক প্রতিবেদন দাবি করে স্বাভাবিকভাবে এরচেয়ে কম পানি পান করলেও অসুবিধা নেই।
পুরুষদের জন্য ২ লিটার আর নারীদের জন্য ১ দশমিক ৬ লিটার পানিই স্বাভাবিক। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়,
দিনের অসংখ্য খাবারের মধ্য দিয়ে পানি প্রবেশ করছে আমাদের দেহে তাই ২ বা দেড় লিটার পানি পানই স্বাভাবিক।
তবে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ গ্রহণকারীদের জন্য বেশি পানি পানের পরামর্শ চিকিৎসকরাই দিয়ে থাকেন।
যাতে শরীর থেকে রাসায়নিক উপাদান দ্রুত প্রস্রাবের মাধ্যমে নিস্কাশিত হয়। জ্বর, ডায়রিয়া জাতীয় অসুখেও বেশি
বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
কিডনির সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদেরাগ ও শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা আছে, এমন রোগীদের পানি পানের পরিমাণটি চিকিৎসকের
কাছ থেকে জেনে নেওয়াই শ্রেয়। অহেতুক অতিরিক্ত পানি পান তাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তবে বর্তমান সময়ে চিকিৎসকদের প্রধান পরামর্শ হচ্ছে, যে পরিমাণ পানিই একজন পান করুক না কেন তাকে
অবশ্যই ফুটানো অর্থাৎ জীবাণুমুক্ত পানি ও পরিশোধিত দূষণমুক্ত পানি পান করতে হবে।

Comments
Post a Comment