পানির অপচয় রোধ করা উচিত
পানির ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিটি পর্যায়ে মিতব্যয়ী হতে হবে। এর অর্থ আসলে কী? আমরা হয়ত সবসময় সেভাবে উপলব্ধি করতে পারি না তবে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে আমরা শতশত লিটার পানি ব্যবহার করে যাচ্ছি। আপনার বাথরুম ফ্ল্যাশ করলে প্রায় ১০ লিটার পানি ব্যবহার হয়, একবার শাওয়ার বা ঝর্না ছেড়ে গোসল করতে দরকার ৫০-৬০ লিটার পানি। বাড়ির কোন সাধারণ ট্যাপ খুলে রাখলে প্রতি মিনিটে ৬ লিটারের চেয়েও বেশি পানি প্রবাহিত হয়। অর্থ্যাৎ প্রতিবার আপনি গোসল করুন, বাথরুম করুন কিংবা দাঁত ব্রাশ করুন, সেখানে একটি খরচ সংযুক্ত আছে যা অনেক সময়ই চোখ এড়িয়ে যায়। এতে যে শুধু আপনার পানির বিলের উপর প্রভাব পড়ে তাই না, এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে পরিবেশের উপরেও। আর এজন্যই আমাদের উচিত প্রতিটি ক্ষেত্রে বাড়িতে পানির অপচয় রোধ করা।
শহরের বিত্তবান ও গরিবদের পানির ব্যবহারে অস্বাভাবিক অসমতা উঠে এসেছে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) একটি গবেষণায়।
ঢাকায় পানির অপচয়
গত ১৮ জুলাই মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার ইন মিলনায়তনে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়। ঢাকার পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে এই গবেষণায় বলা হয়, জনপ্রতি প্রতিদিন পানির ব্যবহার হওয়া উচিত ১৫০ লিটার।
কিন্তু বস্তি এলাকার বাইরে যারা থাকেন, তারা প্রতিদিন গড়ে ৩১০ লিটার করে পানি ব্যবহার করেন। সবচেয়ে বেশি পানির ব্যবহার হয় গুলশান-বনানী এলাকায়। এসব এলাকার বাসিন্দারা গড়ে ৫০৯ লিটার করে পানি ব্যবহার করেন। আর বস্তির বাসিন্দা বা নি¤œ আয়ের মানুষ প্রতিদিন মাত্র ৮৫ লিটার পানি ব্যবহার করেন। সার্বিকভাবে দেখা যায়, ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানির ব্যাপক অপচয় করছেন সমাজের বিত্তবানেরা। অথচ পানির চরম সংকটে আছেন নি¤œবিত্তরা। তারা প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান না। পানি ব্যবহারের এই অসমতা ঠেকাতে এবং অপচয় বন্ধ করতে গবেষণাটিতে বিদ্যুতের বিলের মতো বেশি ব্যবহারে বেশি বিল ধরার সুপারিশ করা হয়েছে।
ঢাকায় সচ্ছল একটি পরিবার শুধু টয়লেটের কমোড ফ্ল্যাশ করে দিনে যতটা পানি খরচ করে, তা দিয়ে বস্তির একটি পরিবার খাবার, রান্না, গোসলসহ সব কাজ চালাতে পারে। অথচ দুটি পরিবারকে একই দামে সরকারের কাছ থেকে পানি কিনতে হয়। ওয়াসার এই পানিতে ধনী ও নি¤œবিত্ত পরিবার ভেদে সরকারের ভর্তুকিতে কোনো বেশি-কম নেই। ধনী পরিবারটি হেলায়-ফেলায়, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, পানির অপচয় করার সুযোগ পায়। অথচ বস্তির পরিবারটি অনেক হিসেব ও টানাটানি করেও অতিপ্রয়োজন মেটাতে পারেন না। পানি সরবরাহকারী একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসার তথ্য এবং নগরবাসীর পানি ব্যবহারের মানদÐ বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তির শুধু ‘অপচয়ের’ পানি দিয়ে একটি পরিবারের সারা দিনের খরচ চলে! এটা অন্যায্য। সচরাচর ধনী পরিবারে একবার কমোড ফ্ল্যাশ করলে ১৫ লিটার পানি যায়। এটা অপচয়। এজন্য সরকার যদি কমোডে পাঁচ লিটার ক্ষমতার লোডাউন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে, তাহলে পানির অপচয় অনেক কমে আসবে।
তাই বলা যায় যে, ঠিকভাবে উপলব্ধি না করেও মানুষ অনেক বেশি পানি ব্যবহার করে প্রতিদিন। আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন আনলেই আমরা পানির অপচয় রোধ করতে পারি খুব সহজেই। এতে যে শুধু পানি দূষণ কমবে তাই না বরং প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার কিছুটা পরিশোধিত হবে। সবাই একসাথে করতে পারলে আসলেই বিশাল অবদান আছে এ সবকিছুর।
দেশের ধনী-গরিব সকলকে পানির অপচয় রোধে সচেতন হতে হবে। সমাজের বিত্তবানরা যদি একটু কম অপচয় করেন, তাহলে দরিদ্র মানুষের পানির অভাব দূর হবে। পানির ব্যবহারে সকলকে সচেতন হতে হবে। দেশের কথা ভেবে, সমাজের কথা ভেবে, যার যার অবস্থান থেকে দায়ীত্বশীল ও সচেতন হলে পানির সংকট দূর করা সম্ভব হবে।
Comments
Post a Comment